আধুনিকতার চোরাবালি ও বাস্তবতা!

সময়ের ক্রমধারায় আমাদের জীবনে অনেক ধরনের পরিবর্তন এসে গেছে। প্রকৃতির মাঝে কাটানো রঙিন জীবন এখন প্রযুক্তি নির্ভর হয়ে গেছে। প্রযুক্তির কল্যাণে আমরা ধীরে ধীরে প্রবেশ করছি তথাকথিত আধুনিক জীবনধারায়। প্রযুক্তির আশীর্বাদে অনেক কঠিন কাজকে যেমন দ্রুত ও সহজে করা সম্ভবপর হয়েছে ঠিক তেমনি এই প্রযুক্তির প্রভাবে আমাদের চালচলন, আচার-আচরণ, কৃষ্টি -সংস্কৃতিতে ও ব্যাপক পরিবর্তন ঘটেছে।

যতই দিন যাচ্ছে,মানুষের চাহিদা ততই বাড়ছে। আধুনিক প্রযুক্তি মানবজীবনে কিছু সুবিধা দিলেও কেড়ে নিয়েছে জীবনের সজীবতা। বিজ্ঞানের নিত্য নতুন উদ্ভাবন মানুষকে ক্রমশ স্বার্থপর বানিয়ে দিচ্ছে। সামাজিক জীবনে হৃদ্যতা,আতিথেয়তা ও আন্তরিকতা বিরল জিনিসে পরিণত হচ্ছে।

বিশ্বাসের ক্ষেত্রগুলো দিন দিন সংকীর্ণ হয়ে আসছে। অসততা,অস্বচ্ছতা ও ধোঁকাবাজি এখন সর্বত্র জায়গা করে নিচ্ছে। আধুনিক দুনিয়ার বহির্ভাগ তো চকচকে, কিন্তু এর অভ্যন্তরে ভয়ংকর অন্ধকার। বাহিরটা দেখতে যতটা সুন্দর,ভেতরটা ঠিক ততটাই কুৎসিত। সমাজের চোখে আধুনিক সময়ের মানুষ সুখী বলে মনে হলেও ভেতরে ভেতরে কষ্টের দাবানলে সে প্রতিদিন জ্বলেপুড়ে মরছে। না পারছে কাউকে বলতে, আর না পারছে হৃদয়ে জমে থাকা কষ্টগুলো সহ্য করতে। এ হিসেবে বলা যায়, মানবজাতি অত্যন্ত কঠিন একটি সময় পার করছে।

বিলাসী একটি বাড়ি, নিউ মডেলের একটি গাড়ি আর একটি লোভনীয় চাকরি যেন মানুষের পরম আরাধ্য। পাশাপাশি কাঁড়ি কাঁড়ি অর্থের কামনা আর নির্ঝঞ্ঝাট জীবনের আকাঙ্ক্ষা মানুষকে পরিণত করেছে পুরোপুরি যান্ত্রিক এক রোবটে।

দুনিয়ার এ আকর্ষণ মূলতঃ এক মরীচিকা,যা দূর থেকে দেখতেই কেবল সুন্দর,কিন্তু বাস্তবতা সেখানে কেবলই শূন্য। আগের সময়ের ন্যাচারাল জীবনই ছিল প্রকৃত জীবন। আর সে ন্যাচারাল জীবনের সাথে সংগতিপূর্ণ একমাত্র জীবনব্যবস্থা ছিল ইসলাম। তখন জাগতিক কিছু সুবিধা কম থাকলেও সমাজে ছিল শৃঙ্খলা আর মানুষের জীবনে ছিল সুখ, শান্তি ও সজীবতা।শিশুদের কোলাহলে ছিল প্রাণবন্ততা,আর বড়দের জীবনে ছিল সুনিয়ন্ত্রিত কর্মব্যস্ততা। কিন্তু আধুনিক সভ্যতা এসে মানুষের জীবনের অর্থটাই পাল্টে দিয়েছে। সুন্দর জীবনকে করে তুলেছে অশান্ত, আর সমাজে সৃষ্টি করেছে অরাজকতা ও চরম বিশৃঙ্খলা।

বর্তমান সময়ে মানুষের অনেক বড় একটি সমস্যা হলো, অপ্রয়োজনীয় চাহিদাকে নিজের জীবনে জায়গা করে দেওয়া। কারও হয়তো কোনোই প্রয়োজন নেই, তবুও সে বিভিন্ন বিজ্ঞাপন ও প্রচারণার ফাঁদে পড়ে নিজের জীবনে নতুন চাহিদা সংযুক্ত করছে। নিত্যনতুন আসবাব দিয়ে ঘর ভরিয়ে তুলছে। রকমারি পোশাক-আশাকে নিজেকে সজ্জিত করছে। হরেক রকমের বাহারি আইটেমের খাবার দিয়ে উদর পূর্ণ করছে।

আধুনিক সভ্যতা সবচেয়ে বেশি ক্ষতি করেছে মুসলিমদের। যাপিত জীবনে ইসলাম মানার প্রবণতা ও দ্বীনদারিতা আশঙ্কাজনকহারে কমিয়ে এনেছে। বস্তুবাদী জীবন মানুষকে ইসলাম ছেড়ে সংশয়বাদের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। ভোগবাদী দর্শন মানুষকে পশুর কাতারে নামিয়ে আনছে। পুরো মানবসভ্যাতা কেমন যেন দুনিয়া নির্ভর হয়ে পড়েছে। স্বার্থপরতা জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে স্থায়ীভাবে আসন গেড়ে বসেছে। মুখলিস ভাইদের আত্মত্যাগ ও দাওয়াতের মেহনতে অল্প কিছু মানুষ দ্বীনের পথে অবিচল থাকলেও বেশিরভাগই রঙিন দুনিয়ার ধোঁকায় প্রতারিত হচ্ছে।

এ সঙিন মুহূর্তে জীবনের চাহিদাকে সীমিত করে দ্বীনের ক্ল্যাসিকাল বুঝকে আঁকড়ে ধরে জীবন পার করাটাই সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। আল্লাহ আমাদের রঙিন দুনিয়ার মিথ্যার ফানুস থেকে বাঁচিয়ে রেখে আমৃত্যু দ্বীনের ওপর অটল ও অবিচল রাখুন।আমীন।

  • আবুল কাসেম আশরাফ
    সহকারী শিক্ষক,
    খরুলিয়া উচ্চ বিদ্যালয়
    খরুলিয়া, সদর, কক্সবাজার।